কম্পিউটারের বিবর্তন ও প্রজন্ম

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | NCTB BOOK

কম্পিউটারের বিবর্তন এবং প্রজন্ম সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের কম্পিউটারের বিকাশের ধারাটি বুঝতে হবে। কম্পিউটারের ইতিহাসকে প্রধানত পাঁচটি প্রজন্মে বিভক্ত করা হয়, এবং প্রতিটি প্রজন্মে নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে কম্পিউটারের ক্ষমতা এবং গঠনগত বৈশিষ্ট্য উন্নত হয়েছে।

কম্পিউটারের প্রজন্মসমূহ:

প্রথম প্রজন্ম- First Generation (১৯৪২-১৯৫৯ খ্রি.)

  • প্রযুক্তি: এই প্রজন্মের কম্পিউটারে ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হতো। এটি ছিল প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার। ভ্যাকুয়াম টিউবগুলি ছিল বড় এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন করত, যার কারণে কম্পিউটারগুলো খুব বেশি বড় আকারের ছিল এবং বিদ্যুৎ খরচও ছিল অত্যধিক।
  • উদাহরণ: ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer) এবং UNIVAC।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • আকারে বিশাল এবং অপারেশন করতে প্রচুর বিদ্যুৎ প্রয়োজন হতো।
    • ত্রুটিপূর্ণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন ছিল।
    • মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজে প্রোগ্রামিং করা হতো।

২য় প্রজন্ম (১৯৬০-১৯৬৪): ট্রানজিস্টর 

  • প্রযুক্তি: এই প্রজন্মে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়, যা ভ্যাকুয়াম টিউবের চেয়ে অনেক ছোট এবং কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করত। ফলে কম্পিউটারগুলির আকার এবং বিদ্যুৎ খরচ উভয়ই কমে আসে।
  • উদাহরণ: IBM 1401 এবং CDC 1604।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • প্রোগ্রামিংয়ের জন্য অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং ফোর্ট্রান (FORTRAN) এবং কোবল (COBOL) এর মতো উচ্চ-স্তরের ভাষা ব্যবহৃত হয়।
    • ছোট এবং দ্রুততর, কিন্তু এখনও তাপ উৎপন্ন করত।
    • কম খরচে বেশি দক্ষতা।

৩য় প্রজন্ম (১৯৬৫-১৯৭০): ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC)

  • প্রযুক্তি: এই প্রজন্মে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) ব্যবহার করা হয়, যেখানে ট্রানজিস্টর এবং অন্যান্য উপাদানগুলো একটি ছোট সিলিকন চিপে স্থাপন করা হয়। এটি কম্পিউটারের আকার এবং খরচ আরও কমিয়ে আনে এবং তাদের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
  • উদাহরণ: IBM System/360।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • মাল্টি-প্রোগ্রামিং এবং অপারেটিং সিস্টেমের প্রবর্তন।
    • উচ্চ-স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষার ব্যবহার যেমন BASIC।
    • কম আকারের এবং কম বিদ্যুৎ খরচ হওয়ার ফলে আরও বেশি প্রচলিত হয়ে ওঠে।

৪র্থ প্রজন্ম (১৯৭১-বর্তমান): মাইক্রোপ্রসেসর

  • প্রযুক্তি: মাইক্রোপ্রসেসরের উদ্ভাবন এই প্রজন্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য। মাইক্রোপ্রসেসর একটি একক চিপে হাজার হাজার IC ধারণ করতে পারে। এটি কম্পিউটারের আকারকে নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনে এবং তাদের আরও দ্রুততর করে তোলে।
  • উদাহরণ: Intel 4004, IBM PC, এবং Apple Macintosh।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • পার্সোনাল কম্পিউটারের (PC) উদ্ভাবন।
    • উচ্চ-ক্ষমতার গ্রাফিক্স এবং মাল্টিমিডিয়া সমর্থন।
    • GUI (Graphical User Interface) এবং নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তির উন্নতি।

৫ম প্রজন্ম (বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ): কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)

  • প্রযুক্তি: এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এই প্রজন্মের উদ্ভাবন যেমন রোবোটিক্স, স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, এবং উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তি (যেমন, ক্লাউড কম্পিউটিং) কম্পিউটারের ক্ষমতাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
  • উদাহরণ: IBM Watson, Google Assistant, এবং স্বয়ংক্রিয় গাড়ি (Autonomous Vehicles)।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • মেশিন লার্নিং এবং ডিপ লার্নিং এর ব্যবহার।
    • ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
    • ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) এবং ক্লাউড কম্পিউটিং।
    • আরও কম আকারের, দ্রুততর এবং অধিক শক্তিশালী।

সারসংক্ষেপ:

কম্পিউটারের প্রতিটি প্রজন্মে নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন কম্পিউটারকে আরও উন্নত এবং সক্ষম করে তুলেছে। প্রজন্মের এই বিবর্তন আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ধারাকে বোঝাতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়।

Content added || updated By

প্রথম প্রজন্ম- First Generation (১৯৪২-১৯৫৯ খ্রি.)

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার বা First Generation Computer (1946-1959)

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৪৬-১৯৫৯) হলো সেই কম্পিউটারগুলো, যা ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো ছিল বড় আকারের, ধীরগতি সম্পন্ন এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারে অদক্ষ। তবুও, এই কম্পিউটারগুলো আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

  • প্রযুক্তি: ভ্যাকুয়াম টিউব, যা বৈদ্যুতিক সংকেতকে নিয়ন্ত্রণ এবং প্রসেসিং করতে ব্যবহৃত হতো।
  • আকার: এই কম্পিউটারগুলো বিশাল আকারের ছিল এবং একটি পুরো কক্ষ জুড়ে থাকত।
  • বিদ্যুৎ খরচ: প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহার করত এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন করত, যা ঠান্ডা করার জন্য অতিরিক্ত কুলিং ব্যবস্থা প্রয়োজন হতো।
  • প্রোগ্রামিং ভাষা: মেশিন ভাষা এবং অ্যাসেম্বলি ভাষা ব্যবহার করে প্রোগ্রাম করা হতো।
  • মেমোরি: প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে ড্রাম মেমোরি বা ম্যাগনেটিক ড্রাম ব্যবহৃত হতো, যা কম্পিউটারের প্রধান মেমোরি হিসেবে কাজ করত।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ:

ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer):

  • এটি প্রথম কার্যকরী ইলেকট্রনিক কম্পিউটার, যা যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪৫ সালে জন প্রেসপার একার্ট (John Presper Eckert) এবং জন মাউচলি (John Mauchly) এর নেতৃত্বে তৈরি করা হয়।
  • ENIAC গাণিতিক হিসাব করতে পারত, বিশেষ করে সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো, যেমন গোলাবারুদ এবং ক্ষেপণাস্ত্রের হিসাব।
  • এটি প্রায় ১৮,০০০ ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল এবং এর ওজন ছিল প্রায় ৩০ টন।

EDVAC (Electronic Discrete Variable Automatic Computer):

  • ENIAC-এর উন্নত সংস্করণ এবং প্রথম কম্পিউটার যা স্টোরড প্রোগ্রাম ধারণা ব্যবহার করে। এটি ১৯৪৯ সালে তৈরি হয়।
  • জন ভন নিউম্যান (John von Neumann) এর নেতৃত্বে EDVAC ডিজাইন করা হয়েছিল এবং এটি মেমোরিতে প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করে রাখত।

UNIVAC I (Universal Automatic Computer):

  • এটি ১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয়েছিল এবং ছিল প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত কম্পিউটার।
  • UNIVAC I যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারির কাজে এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হতো।
  • এটি ছিল প্রথম কম্পিউটার যা বড় আকারে ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের সুবিধা:

  • স্বয়ংক্রিয় গণনা: প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো মানুষের গণনা করার সময় এবং প্রচেষ্টাকে অনেকগুণ কমিয়ে দেয়।
  • গাণিতিক এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সহায়ক: এই কম্পিউটারগুলো গণিত, পদার্থবিদ্যা, এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
  • ডিজিটাল কম্পিউটারের ধারণার বিকাশ: প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার ডিজিটাল কম্পিউটারের ধারণা বিকাশ করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের উন্নত কম্পিউটারের জন্য পথ তৈরি করে।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতা:

  • বিশাল আকার: প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো খুবই বড় এবং ভারী ছিল, যা স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন ছিল।
  • বিদ্যুৎ খরচ এবং তাপ উৎপাদন: প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে এটি চালানো ব্যয়বহুল ছিল এবং অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করত, যার জন্য কুলিং সিস্টেম প্রয়োজন হতো।
  • বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব: ভ্যাকুয়াম টিউবগুলো প্রায়ই ত্রুটিপূর্ণ হতো এবং এগুলোর পরিবর্তন করতে সময় এবং প্রচেষ্টা ব্যয় করতে হতো।
  • ধীরগতি এবং সীমিত মেমোরি: প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর গতি সীমিত ছিল এবং মেমোরি কম ছিল, যা বড় এবং জটিল কাজ সম্পাদন করতে পারত না।

সারসংক্ষেপ:

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। যদিও সেগুলো আকারে বিশাল, ধীরগতির, এবং ত্রুটিপূর্ণ ছিল, তারপরও এগুলোর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় গণনা এবং ডেটা প্রক্রিয়াকরণে বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছিল। প্রথম প্রজন্মের অভিজ্ঞতা এবং সীমাবদ্ধতা পরবর্তী প্রজন্মের উন্নয়নের জন্য মূল্যবান শিক্ষা হিসেবে কাজ করেছে।

Content updated By

দ্বিতীয় প্রজন্ম Second Generation (১৯৬০-১৯৬৪ খ্রি.)

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৬০-১৯৬৪) হলো এমন কম্পিউটার যা ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল। প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহৃত হতো, যা ছিল বড়, ধীর এবং তাপ উৎপন্নকারী। দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর মধ্যে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার প্রথম প্রজন্মের তুলনায় কম্পিউটারগুলোকে ছোট, দ্রুততর, এবং আরও দক্ষ করে তোলে।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

১. ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি:

  • ট্রানজিস্টর ভ্যাকুয়াম টিউবের তুলনায় অনেক ছোট এবং কার্যকর ছিল। এটি কম বিদ্যুৎ খরচ করত এবং কম তাপ উৎপন্ন করত, যা কম্পিউটারের আকার এবং খরচ উভয়ই কমিয়ে আনে।
  • ট্রানজিস্টর কম্পিউটারগুলোর নির্ভরযোগ্যতা এবং গতিকে উন্নত করে, ফলে সেগুলি আরও জটিল কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম হয়।

২. উন্নত স্টোরেজ এবং মেমোরি:

  • দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে ম্যাগনেটিক কোর মেমোরি ব্যবহৃত হতো, যা প্রথম প্রজন্মের ড্রাম মেমোরির তুলনায় দ্রুততর এবং কার্যকর ছিল।
  • ম্যাগনেটিক টেপ এবং ডিস্ক স্টোরেজ ব্যবহৃত হয়, যা ডেটা সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণে আরও উন্নত সমাধান দেয়।

৩. উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষার ব্যবহার:

  • প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে মেশিন ভাষা (০ এবং ১) ব্যবহার করা হতো। দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে অ্যাসেম্বলি ভাষা, ফোর্ট্রান (FORTRAN) এবং কোবল (COBOL) এর মতো উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহৃত হতে থাকে, যা প্রোগ্রামিং এবং ডেটা প্রসেসিংকে আরও সহজ এবং দক্ষ করে তোলে।
  • এই ভাষাগুলো ব্যবহার করে প্রোগ্রাম তৈরি করা সহজ হয়ে যায় এবং কম্পিউটার ব্যবহারকারী বা প্রোগ্রামারদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

৪. ছোট আকার এবং উচ্চতর গতি:

  • দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো আকারে ছোট এবং দ্রুততর ছিল। সেগুলি কক্ষের আকারের পরিবর্তে ডেস্কের আকারে হতে থাকে, যা তাদের অফিস এবং ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের জন্য উপযোগী করে তোলে।
  • ট্রানজিস্টর প্রযুক্তির কারণে প্রসেসিং গতি বৃদ্ধি পায়, যা জটিল গাণিতিক এবং বৈজ্ঞানিক কাজ দ্রুততার সাথে সম্পাদন করতে পারে।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ:

  • IBM 1401: দ্বিতীয় প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় কম্পিউটার যা ডেটা প্রসেসিং এবং বাণিজ্যিক কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।
  • IBM 7094: এটি একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার যা বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত গণনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।
  • UNIVAC II: UNIVAC সিরিজের একটি উন্নত সংস্করণ যা দ্বিতীয় প্রজন্মের ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের প্রভাব:

  • বাণিজ্যিক এবং শিল্পক্ষেত্রে বিস্তার: দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার বৃদ্ধি পায়, কারণ সেগুলি আরও নির্ভরযোগ্য এবং খরচ সাশ্রয়ী ছিল।
  • বিজ্ঞান এবং গবেষণায়: বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত কাজের জন্য দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, যেমন মহাকাশ গবেষণা এবং গণিতের জটিল সমস্যার সমাধান।
  • প্রোগ্রামিং ভাষার বিকাশ: উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষার ব্যবহারে প্রোগ্রামিংয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তী প্রজন্মের কম্পিউটার ও সফটওয়্যার উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

সীমাবদ্ধতা:

  • যদিও ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি অনেক উন্নত ছিল, তবে তা এখনও কিছু ত্রুটি এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে এসেছিল, যেমন তাপ উৎপন্ন করা এবং জটিল সার্কিট ডিজাইন।
  • পরবর্তী প্রজন্মে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) প্রযুক্তির উদ্ভাবন দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করে এবং তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের ভিত্তি স্থাপন করে।

সারসংক্ষেপ:

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথম প্রজন্মের তুলনায় আরও উন্নত, দ্রুত এবং কার্যকর হয়ে ওঠে। এই প্রজন্মটি আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল, যা কম্পিউটার ব্যবহারের প্রাথমিক পর্যায় থেকে বাণিজ্যিক, বৈজ্ঞানিক, এবং শিল্পক্ষেত্রে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করে।

Content updated By

তৃতীয় প্রজন্ম Third Generation (১৯৬৫-৭০ খ্রি.)

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (Third Generation of Computers) প্রায় ১৯৬৫ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) ব্যবহার করা শুরু হয়, যা কম্পিউটারের আকার ও বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে আনে এবং এর কার্যক্ষমতা ও গতি অনেক বৃদ্ধি করে। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ব্যবহার কম্পিউটার শিল্পে বিপ্লব ঘটায় এবং আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি স্থাপন করে।

তৃতীয় প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) ব্যবহার:

  • তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে ট্রানজিস্টরের পরিবর্তে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহার করা হয়, যা ছোট সিলিকন চিপে হাজার হাজার ট্রানজিস্টর যুক্ত করে।
  • IC-এর ব্যবহার কম্পিউটারের আকার ও বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে দেয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

কম্পিউটারের আকার ছোট হওয়া:

  • এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় অনেক ছোট এবং হালকা ছিল, ফলে এগুলি সহজেই ইনস্টল এবং ব্যবহার করা সম্ভব ছিল।

উন্নত অপারেটিং সিস্টেম:

  • তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে উন্নত অপারেটিং সিস্টেম (OS) ব্যবহৃত হয়, যা মাল্টি-প্রোগ্রামিং এবং মাল্টি-টাস্কিং সুবিধা প্রদান করে।
  • কম্পিউটার একাধিক প্রোগ্রাম একসাথে চালাতে এবং বিভিন্ন ব্যবহারকারীকে সমর্থন করতে সক্ষম হয়েছিল।

উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা:

  • এই প্রজন্মে FORTRAN, COBOL, এবং BASIC এর মতো উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হতো, যা প্রোগ্রামিংকে আরও সহজ এবং কার্যকর করত।
  • কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সহজ হওয়ার কারণে এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে প্রোগ্রামিং করা আগের চেয়ে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ব্যবহারের সহজতা এবং কার্যকারিতা:

  • তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো আরও নির্ভুল এবং দ্রুত ছিল। IC-এর ব্যবহার কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা এবং নির্ভুলতা বৃদ্ধি করে।
  • কম বিদ্যুৎ খরচের কারণে এগুলির ব্যবহার আরও কার্যকর হয়ে ওঠে, এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় সহজ ছিল।

তৃতীয় প্রজন্মের উদাহরণ:

  • IBM System/360: এটি তৃতীয় প্রজন্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এটি ছিল প্রথম কম্পিউটার যা বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারত এবং বিভিন্ন মডেল হিসেবে উপলব্ধ ছিল।
  • Honeywell 6000 series এবং PDP-8: এই কম্পিউটারগুলোও তৃতীয় প্রজন্মের আইসির ভিত্তিতে তৈরি এবং কার্যকরভাবে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতো।

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের গুরুত্ব:

  • মাল্টি-প্রোগ্রামিং ও মাল্টি-টাস্কিং: কম্পিউটারে একসঙ্গে একাধিক প্রোগ্রাম চালানো এবং বিভিন্ন ব্যবহারকারীকে সাপোর্ট দেওয়ার ক্ষমতা তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল।
  • বাণিজ্যিক ব্যবহার: এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলির আকার ছোট হওয়ার কারণে, এগুলি ব্যবসা, শিক্ষা, এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
  • উন্নত প্রোগ্রামিং সুবিধা: উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহারের ফলে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট আরও সহজ এবং কার্যকর হয়ে ওঠে, যা পরবর্তী সময়ে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির বিকাশে সহায়ক হয়।

তৃতীয় প্রজন্মের সীমাবদ্ধতা:

  • যদিও তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে IC ব্যবহারের কারণে আকার ও বিদ্যুৎ খরচ কমেছিল, কিন্তু সেই সময়ে প্রযুক্তিগতভাবে আরও ছোট আকারের IC তৈরি করা চ্যালেঞ্জিং ছিল।
  • উন্নত অপারেটিং সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও, কিছু জটিল কাজের জন্য এটির ক্ষমতা সীমিত ছিল।

সারসংক্ষেপ:

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো কম্পিউটার প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ এতে IC-এর ব্যবহার কম্পিউটারের আকার, কর্মক্ষমতা, এবং কার্যকারিতার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এনেছিল। এই প্রজন্মের প্রযুক্তি পরবর্তীতে আরও উন্নত চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

Content updated By

চতুর্থ প্রজন্ম- Fourth Generation (১৯৭১ খ্রি. - বর্তমান)

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৭১ - বর্তমান) হলো সেই কম্পিউটার, যা মাইক্রোপ্রসেসর এবং ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর আকার ছোট, শক্তিশালী এবং দক্ষতায় উন্নত। এটি ডিজিটাল কম্পিউটারের ইতিহাসে একটি বিপ্লবী পরিবর্তন এনেছে, কারণ মাইক্রোপ্রসেসরের উদ্ভাবনের মাধ্যমে কম্পিউটারগুলো আরও সাশ্রয়ী, বহনযোগ্য এবং কার্যকর হয়ে উঠেছে।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

  • মাইক্রোপ্রসেসর: এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় উদ্ভাবন হলো মাইক্রোপ্রসেসর। মাইক্রোপ্রসেসর হলো একটি ছোট চিপ, যা সিপিইউ (Central Processing Unit) এর সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
  • ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC): প্রথম প্রজন্মের তুলনায় IC-এর মিনিaturization এবং উন্নত ডিজাইন চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারকে ছোট, শক্তিশালী এবং কার্যকর করেছে।
  • পার্সোনাল কম্পিউটার (PC): চতুর্থ প্রজন্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো পার্সোনাল কম্পিউটারের (PC) উদ্ভাবন, যা সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য।
  • গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI): এই প্রজন্মে কম্পিউটারগুলোতে গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) এবং মাউস ব্যবহৃত হয়, যা কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ এবং ইন্টারেক্টিভ করে তোলে।
  • নেটওয়ার্কিং এবং ইন্টারনেট: চতুর্থ প্রজন্মে কম্পিউটারগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্কিং এবং ইন্টারনেট প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে, যা তথ্য বিনিময় এবং যোগাযোগের জন্য একটি বিপ্লবী পরিবর্তন আনে।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ:

Intel 4004 মাইক্রোপ্রসেসর:

  • ১৯৭১ সালে ইন্টেল কোম্পানি প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর (Intel 4004) তৈরি করে। এটি ছিল একটি ছোট চিপ, যা পূর্ণ সিপিইউ হিসাবে কাজ করতে পারত।
  • এর উদ্ভাবন চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের সূচনা করে এবং এটি কম্পিউটার প্রযুক্তিতে এক বিপ্লব নিয়ে আসে।

IBM PC (Personal Computer):

  • ১৯৮১ সালে IBM প্রথমবারের মতো একটি বাণিজ্যিক পার্সোনাল কম্পিউটার (PC) তৈরি করে, যা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
  • এটি ব্যক্তিগত, অফিসিয়াল এবং শিক্ষামূলক কাজের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।

Apple Macintosh:

  • ১৯৮৪ সালে অ্যাপল Macintosh কম্পিউটার উন্মোচন করে, যা প্রথমবারের মতো GUI (Graphical User Interface) এবং মাউসের সমন্বয় ব্যবহার করে।
  • এটি কম্পিউটার ব্যবহারকে আরও সহজ এবং ইন্টারেক্টিভ করে তোলে এবং সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে কম্পিউটারকে জনপ্রিয় করে তোলে।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের সুবিধা:

  • ছোট এবং বহনযোগ্য: মাইক্রোপ্রসেসর এবং উন্নত IC-এর ব্যবহার কম্পিউটারগুলোকে ছোট, হালকা এবং বহনযোগ্য করে তুলেছে।
  • দ্রুত এবং শক্তিশালী: চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো খুব দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং শক্তিশালী। তারা জটিল গাণিতিক কাজ, ডেটা বিশ্লেষণ, এবং গ্রাফিকাল প্রসেসিং দ্রুততার সঙ্গে করতে পারে।
  • সাশ্রয়ী: চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য, যার ফলে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ে।
  • নেটওয়ার্কিং এবং ইন্টারনেট: এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো ইন্টারনেট এবং নেটওয়ার্কিং ক্ষমতা সমন্বিত, যা বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ এবং তথ্য বিনিময়কে সহজ করে তুলেছে।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতা:

  • সফটওয়্যার নির্ভরতা: চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে, যার কারণে সফটওয়্যার সমস্যা বা ভাইরাসের আক্রমণের কারণে সিস্টেম ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে।
  • উচ্চ তাপ উৎপাদন: মাইক্রোপ্রসেসর এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন IC-এর কারণে কম্পিউটারগুলো উচ্চ তাপ উৎপন্ন করে, যা কুলিং ব্যবস্থার প্রয়োজন সৃষ্টি করে।
  • সাইবার সিকিউরিটি ঝুঁকি: নেটওয়ার্কিং এবং ইন্টারনেটের বিস্তারের কারণে সাইবার সিকিউরিটির ঝুঁকি বাড়ে, এবং তথ্য চুরি বা সাইবার হামলার সমস্যা দেখা দেয়।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের গুরুত্ব:

  • বৈপ্লবিক পরিবর্তন: চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে এবং সাধারণ মানুষকে কম্পিউটারের ব্যবহারের সুবিধা দেয়।
  • বাণিজ্যিক এবং বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন: চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো ব্যবসা, বিজ্ঞান, শিক্ষা, এবং বিনোদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
  • ডিজিটাল যুগের সূচনা: এই প্রজন্মের কম্পিউটারের মাধ্যমে ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়, যা আমাদের জীবন এবং কাজের পদ্ধতিকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে।

সারসংক্ষেপ:

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার হলো কম্পিউটিং প্রযুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন। মাইক্রোপ্রসেসরের উদ্ভাবন এবং ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের মিনিaturization চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোকে ছোট, দ্রুত, এবং সাশ্রয়ী করে তুলেছে। এটি আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করেছে এবং ডিজিটাল যুগের সূচনা করেছে, যা এখনও বর্তমান সময়ে ব্যবহারিত হচ্ছে এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।

Content updated By

পঞ্চম প্রজন্ম - Fifth Generation (ভবিষ্যৎ)

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার হলো বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কম্পিউটার প্রযুক্তি, যা প্রধানত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence - AI) এবং উন্নত মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে। পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার প্রযুক্তি স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ভাষা অনুধাবন, এবং জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো আরও বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ এবং স্বায়ত্তশাসিত সিস্টেম তৈরি করা, যা মানুষের চিন্তা ও আচরণ অনুকরণ করতে পারে।

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার:

  • এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা তাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ভাষা অনুধাবন, এবং জটিল সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম করে।
  • AI-ভিত্তিক সফটওয়্যার, যেমন মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং, এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP), ব্যবহার করে কম্পিউটারগুলো মানুষের ভাষা, অনুভূতি, এবং আচরণ বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারে।

২. ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP):

  • পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে মানুষের ভাষা বুঝতে এবং প্রসেস করতে NLP ব্যবহার করা হয়। এর ফলে, কম্পিউটার সরাসরি মানুষের সাথে কথা বলতে এবং মানুষের আদেশ গ্রহণ করতে পারে।
  • বর্তমানে AI অ্যাসিস্ট্যান্ট যেমন Google Assistant, Apple Siri, এবং Amazon Alexa এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

৩. ন্যানোটেকনোলজি এবং উন্নত মাইক্রোপ্রসেসর:

  • পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো ন্যানোটেকনোলজি এবং উন্নত সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, যা আরও ছোট, দ্রুত, এবং শক্তিশালী প্রসেসর তৈরি করতে সহায়ক।
  • Quantum Computing (কোয়ান্টাম কম্পিউটিং) এর উন্নয়নের মাধ্যমে কম্পিউটারের গণনামূলক ক্ষমতা আরও বাড়ানো হচ্ছে, যা আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক বেশি জটিল এবং দ্রুত কাজ করতে সক্ষম।

৪. রোবোটিক্স এবং স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা:

  • পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তি রোবোটিক্সে বিপ্লব ঘটাচ্ছে, যেখানে রোবট স্বয়ংক্রিয়ভাবে জটিল কাজ করতে পারে এবং মানুষের মতো আচরণ করতে পারে।
  • স্বয়ংক্রিয় গাড়ি (Autonomous Vehicles) এবং স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থা (Automated Manufacturing Systems) এই প্রযুক্তির উদাহরণ।

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ:

  • IBM Watson: একটি উন্নত AI-ভিত্তিক কম্পিউটার যা ভাষা অনুধাবন এবং জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
  • Google DeepMind: এটি মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে এমন একটি সিস্টেম, যা বিভিন্ন খেলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এবং শেখার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে।
  • Autonomous Vehicles: Tesla এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, যা AI এবং সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেই চালনা করতে পারে।

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের প্রভাব:

  • স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ: AI-এর মাধ্যমে কম্পিউটার এবং সিস্টেমগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, যা বাণিজ্যিক এবং শিল্পক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাচ্ছে।
  • স্বাস্থ্যসেবা: AI এবং মেশিন লার্নিং চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা প্রদান, এবং রোগীর তথ্য বিশ্লেষণের জন্য।
  • বাণিজ্যিক ক্ষেত্র: কাস্টমার সার্ভিস, ফিনান্সিয়াল অ্যানালাইসিস, এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনায় AI ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:

  • কোয়ান্টাম কম্পিউটিং: এটি পঞ্চম প্রজন্মের একটি অগ্রগণ্য প্রযুক্তি, যা ভবিষ্যতের জটিল সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা হবে। এটি বর্তমানের ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।
  • স্বায়ত্তশাসিত ব্যবস্থা: ভবিষ্যতে আরও স্বয়ংক্রিয় রোবট এবং গাড়ি তৈরি হবে, যা AI এবং সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের মতো আচরণ করতে সক্ষম হবে।
  • মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ: ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) এবং মেশিন লার্নিং-এর উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের কম্পিউটারগুলো আরও উন্নতভাবে মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে সক্ষম হবে।

সীমাবদ্ধতা:

  • নির্ভরযোগ্যতা: AI ভিত্তিক সিস্টেমগুলো এখনও সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য নয়, এবং সেগুলোর স্বায়ত্তশাসিত সিদ্ধান্ত অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে।
  • গোপনীয়তা এবং সাইবার নিরাপত্তা: AI এবং উন্নত কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রচুর ডেটা সংগ্রহ করা হয়, যা সাইবার হামলা এবং তথ্য গোপনীয়তার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • এথিক্যাল চ্যালেঞ্জ: AI প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নৈতিক প্রশ্ন এবং এথিক্যাল চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থার ব্যবহার এবং মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার হুমকি।

সারসংক্ষেপ:

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং উন্নত মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে কম্পিউটারের ক্ষমতা এবং কার্যকারিতা অনেকগুণ বাড়িয়েছে। এটি বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে সক্ষম, এবং এটি বিজ্ঞান, বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা, এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটাচ্ছে। AI, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, এবং রোবোটিক্সের বিকাশের মাধ্যমে এই প্রজন্মের প্রযুক্তি আরও উন্নত এবং কার্যকর হবে।

Content updated By
Promotion